Monday, 20 January 2025 | 12:08 PM
  1. সর্বশেষ
  2. জাতীয়
  3. আন্তর্জাতিক
  4. রাজনীতি
  5. ইসলাম
  6. মানবসেবা
  7. শিক্ষা
  8. তথ্য প্রযুক্তি
  9. স্বাস্থ্য
  10. খেলা
  11. সাহিত্য
  12. বিনোদন
  13. অর্থনীতি-ব্যবসা
  14. লাইফস্টাইল
  15. আইন আদালত
  16. কর্পোরেট কর্ণার
  17. ফিচার
  18. শেয়ারবাজার
  19. জেলার খবর
  20. এক নজরে সারাদেশ
  21. আরও

অন্তরের ৩ টি রোগ

অন্তরের প্রধান ৩টি রোগ হলো- অহংকার, হিংসা ও লোভ! এই ৩টি রোগের একটিই অন্তরকে আল্লাহ এর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে।

আমাদের সন্তানরা কিন্তু এক একটি পরীক্ষা। প্রায়ই মা বাবারা অন্য বাচ্চার সাথে নিজের বাচ্চাকে তুলনা করে ফেলেন। অথচ এটা শুধু নিজের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং সন্তানদের জন্যও ভয়াবহ গুনাহ এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

“স্কুল লাইফে আমার এক ক্লাসমেটের আম্মু নিজের মেয়ের সাথে আমাকে এক অসুস্থ রকমের প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়েছিলেন৷

প্রতি এক্সামের মার্ক্স দিলে উনি আগে জিজ্ঞেস করতো ‘পাপড়ি কত পাইছে?’ নিজের মেয়ে একশতম হলেও উনার চিন্তা থাকতো আমি কি উনার মেয়ের আগে না পিছে!

ক্যাডেট কলেজে চান্স পাবার পর উনি আম্মুর ফোন নাম্বার রেখে বলছিলেন যে ছয় বছর পর নাকি উনি আম্মুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবেন আমি কোথায় চান্স পেয়েছি।

এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, উনি আম্মুকে এডমিশন টেস্টের পর ফোন দিয়েছিলেন এটা জানার জন্য যে আমি কোথায় এডমিশন নিচ্ছি!

…উনিই একমাত্র গার্জিয়ান নন, আমাদের জেনারেশনের অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের এরকম কোনো না কোনো অঘোষিত কম্পিটিটর ছিল, হোক সেটা স্কুলে বা ফ্যামিলির কোনো কাজিনের সাথে৷

এভাবে গোটা দুইটা জেনারেশন নিজেদের কোনো এচিভমেন্ট তো এঞ্জয় করতে পারেনাই তো নাইই, এমনকি অন্যের কোনো এচিভমেন্টও খুশিমনে এক্সেপ্ট করতে পারেনাই।

এভাবে দুইটা জিনিস হয়— এক, আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা যায় না। এটা খুব বড় অকৃতজ্ঞতা, এটাই জীবনে বারাকাহ কমানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আল্লাহ বলেছেন তুমি যদি কৃতজ্ঞ থাকো তাহলে আমি তোমাকে আরো দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে আমার শাস্তি ভয়াবহ! আর নিজের জীবন নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে না পারার মত শাস্তি আর কী হতে পারে!

কুরআন কিন্তু কখনো সুখের মূলমন্ত্র দেয় না। কুরআনে কত উপদেশ আছে, যাতে আমরা চিন্তাশীল হতে পারি, সফলকাম হতে পারি, কৃতজ্ঞ হতে পারি।

কিন্তু আল্টিমেটলি দুনিয়ায় সুখী হতে পারা যাবে কী করলে সেটা আল্লাহ বলে দেন নাই। এমনকি জান্নাতে গেলেও যে আমরা সুখী হবো সেটা আল্লাহ বলেন নাই, বরং বলছেন আমরা সন্তুষ্ট হবো৷

জীবনে সুখী হবার আসল মূলমন্ত্র হলো সন্তুষ্ট থাকা, যা আমরা এরকম অসুস্থ কম্পিটিশনে হারিয়ে ফেলি। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন অপরের রিযিকের সাথে নিজেরটা তুলনা না করতে। অথচ এই কম্প্যারিজনের চক্করে পড়ে আমরা হারিয়েছি শৈশবের কিছু সোনালী দিন।

আরেকটা যেটা হয় সেটা হলো— অহংকারী হয়ে উঠা। আমি অমুকের চেয়ে ভালো পজিশনে আছি এই মনোভাব মানুষকে শয়তানের যতটা কাছে নেয় ততটা আর কিছুতেই হয়না।

‘আমি আগুনের তৈরী আর আদম মাটির তৈরী, সুতরাং আমি উত্তম’ এটাই ছিল সৃষ্টিজগতের আদিমতম গুনাহ। এর কারণে শয়তান জান্নাত থেকে নয় বরং আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা থেকে নির্বাসিত হয়েছিলো৷ তার ইগো তাকে ইভেন ক্ষমাপ্রার্থনা করতেও দেয়নি যদিও সে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় ইবাদাতকারী ছিল।

সুতরাং আমি ‘কারো চেয়ে’ উত্তম – এই মনোভাব অনেক বড় ইবাদাতকারীর আমলও বিনষ্ট করে দিতে পারে। এই অহংকার ও ইগোর কারণে মানুষ ক্ষমাপ্রার্থনা ভুলে যায়। নিজের ভুল বুঝতে পারা ভুলে যায়। নিজেকে সংশোধন করা ভুলে যায়। কারণ তার মনে এই ধারণা গেড়ে বসেছে ‘আমি তো উত্তমই, আমার ঠিক হবার কিছু নেই।’

যে কারণে এত বড় লেখা ফেঁদে বসলাম। ভাবছিলাম সেই হাদিসটার কথা যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— আমাদের মাঝে কেউ প্রকৃত মুমিন হবেনা যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা সে নিজের জন্যও পছন্দ করে।

এই একটা হাদিস আমাদের মধ্যেকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর কম্প্যারিজনের খেলার মূলে কুঠারাঘাত করে। কিন্তু কেন?

মুমিন হবার জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলে বিশ্বাস করা, নেক আমল করা জরুরি। তাদের সাথে একই কাতারে চলে আসছে ‘নিজের ও ভাইয়ের জন্য একই জিনিস পছন্দ করা’।

আমরা যদি নিজের জন্য অন্য কারো চেয়ে ভালো চাই তাহলে চাওয়াটা কেমন শোনাবে?

‘আল্লাহ আমাকে অমুকের চেয়ে বেশি বেতনের চাকরি দাও/ সন্তান দাও/ সম্পদ দাও/ সম্মান দাও….’ এভাবে বলে আল্লাহ কাকে কতটুকু দিবেন, দিতে পারেন তা ডিক্টেট করার মত দুঃসাহস আমরা দেখিয়ে ফেলছি না?

কিংবা ‘অমুকের ক্ষতি হোক / উন্নতি না হোক/ সমস্যা হোক/ চাওয়া পূরণ না হোক….’ এরকম বলার সাথে আল্লাহর রহমত বা উত্তম রিযিক নেমে আসাকে বাধা দিতে চাওয়ার পার্থক্য আছে?

নাই তো। আল্লাহ হচ্ছেন আস সামাদ। অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ কোনো সিদ্ধান্ত কারোর ভ্যালিডেশান পাওয়ার জন্য নেন না, কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য নেন না। কারো জন্য খারাপ চাওয়া বা নিজের জন্য ‘অন্য কারো থেকে উত্তম চাওয়া’র মাধ্যমে মানুষ এভাবেই আল্লাহর ক্যাপাবিলিটিকে ছোট করে ফেলে— তাহলে সে আর প্রকৃত মুমিন রইলো কই?

বেসিক্যালি আমরা যখন অন্যের জন্য আর নিজের জন্য একই জিনিস চাই তখন ইনহেরেন্টলি স্বীকার করে নেই আল্লাহর কাছে আসলে আমরা সবাই সমান।

সর্বশেষ - সর্বশেষ