Monday, 20 January 2025 | 12:26 PM
  1. সর্বশেষ
  2. জাতীয়
  3. আন্তর্জাতিক
  4. রাজনীতি
  5. ইসলাম
  6. মানবসেবা
  7. শিক্ষা
  8. তথ্য প্রযুক্তি
  9. স্বাস্থ্য
  10. খেলা
  11. সাহিত্য
  12. বিনোদন
  13. অর্থনীতি-ব্যবসা
  14. লাইফস্টাইল
  15. আইন আদালত
  16. কর্পোরেট কর্ণার
  17. ফিচার
  18. শেয়ারবাজার
  19. জেলার খবর
  20. এক নজরে সারাদেশ
  21. আরও

সিরিয়ার রাজনীতির ভবিষ্যত কী হবে?

বাশারের পতনের পর থেকে যে প্রশ্নটা অনেকের মাথায়ই আসছে, সেটা হচ্ছে সিরিয়ার রাজনীতির ভবিষ্যত কী হবে? সেখানে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, নাকি শরিয়াতন্ত্র টাইপের কিছু একটা প্রতিষ্ঠিত হবে?

এ কথা সত্য যে নিজেদের জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ জয় করে, ভবিষ্যত নির্মাণে তাদের ইচ্ছারই সবচেয়ে বেশি প্রতিফলন ঘটা স্বাভাবিক। সে হিসেবে আফগানিস্তানের মতো সিরিয়াতেও যেহেতু প্রধানত ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের বিজয় হয়েছে, তাই সেখানেও গণতন্ত্র না এসে ইসলামিক কোনো এক ধরনের শাসনব্যবস্থা আসার পক্ষেই জোরালো অবস্থান দেখা যেতে পারে।

কিন্তু একইসাথে এটাও সত্য, সিরিয়া এবং আফগানিস্তান এক না। সিরিয়ার আন্দোলনটা শুরুই হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। পরবর্তীতে সেখানে ইসলামপন্থী যোদ্ধারা নেতৃত্ব দিয়েছে ঠিকই; কিন্তু ২০১১ থেকে অন্তত ২০১২ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সেখানে বাশারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল গণতন্ত্রপন্থীরা।

তারা এমনকি লিবারেটেড এরিয়াগুলোতে “তানসিক্বিয়া” তথা লোকাল কোর্ডিশন কমিটি (LCC) গঠন করে অনেকটা গণতান্ত্রিকভাবেই এলাকাগুলো পরিচালনা করেছিল। অনেক এলাকায় তারা সরাসরি নির্বাচনেরও আয়োজন করেছিল।

ইনফ্যাক্ট, ২০১১ সালেরও শত বছর আগে, ইউরোপেরও অনেক দেশে যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তখনই সিরিয়ান আরবরা উদ্যোগ নিয়েছিল সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। সেসময় সিরিয়ার নির্বাচিত জনপ্রতিধিরা এমন একটি সংবিধান রচনা করেছিলেন, শত বছর পরেও বিশ্বের অনেক দেশের জন্য যা ঈর্ষণীয় হয়ে আছে।

সেই সংবিধানে বিলাদ আল-শাম তথা বৃহত্তর সিরিয়াকে ঘোষণা করা হয়েছিল একটি গণপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজতন্ত্র হিসেবে, যেখানে রাজার ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত এবং অধিকাংশ ক্ষমতা ছিল নির্বাচিত সংসদের হাতে ন্যস্ত।

কামাল আতাতুর্কের তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠারও তিন বছর আগে রচিত সিরিয়ার এই সংবিধান ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। এই সংবিধানে কোনো রাষ্ট্রধর্ম ছিল না। বরং সকল ধর্মের নাগরিকদের জন্য সেখানে ছিল সমানাধিকার।

ধর্ম বিষয়ে সেখানে কেবল বলা ছিল, রাজার ধর্ম হতে হবে ইসলাম। অথচ যে সংসদ সদস্যরা এই সংবিধান পাশ করেছিলেন, তাদের অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন অটোমান আমলের রক্ষণশীল নেতা। এবং সেসময় সংসদের প্রেসিডেন্ট, যার উদ্যোগেই মূলত এই সংবিধান আলোর মুখ দেখেছিল, তিনি ছিলেন সে সময়ের আরব বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামিক স্কলার রাশিদ রিদা।

এমনকি খোদ আমেরিকায়ও যখন নারীরা ভোটাধিকার পায়নি, তখন এই সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করার সময় সিরিয়ান আরব কংগ্রেসের সদস্যরা সিরিয়ান নারীদেরকে ভোটাধিকার দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করেছিলেন।

শেষপর্যন্ত সমাজের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ঐ মূহুর্তে নারীদেরকে ভোটাধিকার না দিলেও তারা সংবিধানের ঐ ধারার জন্য এমনভাবে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শব্দ নির্বাচিত করেছিলেন, যেন যেকোনো মুহূর্তে নারীদেরকে ভোটাধিকার দিতে কোনো সমস্যা না হয়।

সিরিয়ার এই সংবিধান যদি কার্যকর হতে পারত, তাহলে তার ধারাবাহিকতায় আজ হয়তো আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি আরব বিশ্ব দেখতে পেতাম, যে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই হতো গণতান্ত্রিক। কিন্তু সেটি যে হয়নি, তার কারণ আর কিছুই না; ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক স্বার্থ এবং পরবর্তীতে জোরপূর্বক শাসন করা একের পর এক স্বৈরতন্ত্র।

মূল বিষয়টা হচ্ছে, আফগানিস্তানের ইতিহাস এবং সিরিয়ার ইতিহাস এক না। এবং সে কারণেই সিরিয়ার ভবিষ্যত নির্মাণে আগামী দিনগুলোতে বিজয়ী ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের ইচ্ছার প্রতিফলন যেমন থাকবে, তেমনি এই ইতিহাসের ধারাবাহিকতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিজয়ী যোদ্ধাদের চাওয়া-পাওয়া বাদ দিয়ে যদি পশ্চিমা ফর্মূলা অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়, তাহলে যেমন শুরুতেই সহিংসতা ফিরে আসবে, তেমনই এই দীর্ঘকালীন ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে যদি নতুন কোনো একদলীয় বা এক-গ্রুপীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সেটাও সিরিয়ার জন্য ক্ষতিকর হবে।

সর্বশেষ - সর্বশেষ